আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন জো বাইডেন। স্থানীয় সময় বুধবার বেলা ১১টায় ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনে শপথবাক্য পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট। বিগত চার বছরে ঘৃণা আর বিভক্তির সূত্রে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিলেন জো বাইডেন। তিনি ৪৬তম প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে অবসান হলো ট্রাম্প জামানার।
শপথের কিছু সময় আগে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে অভিষেক অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন। এর আগেই সেখানে পৌঁছেছিলেন কমলা হ্যারিস ও তার স্বামী ডাও এমহফ। একসঙ্গে তারা ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠেন। সে সময় তাদের স্বাগত জানান মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
অনুষ্ঠানস্থলে আগে থেকেই হাজির ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা। বিচারপতি সোনিয়া সটোমেয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে শপথ পাঠ করান। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি।
৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে শপথ পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। ২০০৯, ২০১৩ সালে বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় যে পারিবারিক বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে সেই একই বাইবেল ব্যবহার করেন বাইডেন। বাইবেলটি পাঁচ ইঞ্চি পুরু। ১৮৯৩ সাল থেকে তার পরিবারের সংগ্রহে রয়েছে এটি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া ছাড়াও ১৯৭৩ সাল থেকে সাতবার সিনেটর হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় প্রত্যেকবারই এটি ব্যবহার করেছেন তিনি।
অভিষেক অনুষ্ঠানস্থলে আগেই এসে উপস্থিত হন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ২০১৬ সালের ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত হন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।
হোয়াইট হাউসে যখন জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে, তখন শেষবারের মতো এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে ফ্লোরিডায় পৌঁছান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতে তাকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিদায় জানানো হয়। সেখানে তিনি ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
বাইডেনের জন্য মার্কিন রাজনীতির চূড়ায় পৌঁছানোর এই পথ মোটেও সহজ ছিল না। তিনবারের চেষ্টায় এই সাফল্য ধরা দিয়েছে তার হাতে। ১৯৮৭ এবং ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বাইডেন। দু’বারই ব্যর্থ হন। কিন্তু ২০২০ সালে আর নিরাশা নয়, ধরা দিয়েছে বহুল প্রত্যাশিত সেই সফলতা। বিপুল ভোটে জিতে ট্রাম্পের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছেন হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ।
তবে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন- এটাই যেন বাইডেনের জীবনে কঠিন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত কষ্ট করে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, তার চেয়ে আরও কয়েকগুণ দুর্ভোগ হয়তো অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে।
নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাইডেনকে। ট্রাম্প পরাজয় অস্বীকার করেছেন বার বার। ক্ষমতা হস্তান্তরে তার প্রশাসন চরম অসহযোগিতা করেছে বাইডেন টিমকে।
সাধারণত অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রচুর লোকসমাগম হয়। ক্যাপিটল হিলের ওয়েস্ট ফ্রন্টে বহু মানুষ নিবন্ধন করে বা আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার সাধারণের জন্য কোনো আমন্ত্রণপত্র ছিল না। ছিল না নিবন্ধন করে এতে যোগ দেওয়ার কোনো সুযোগ। এই শূন্যতা ঢাকতে ওয়েস্ট ফ্রন্টে বসানো হয়েছে হাজারো মার্কিন পতাকা। বাইরে ভিড় করে থাকা মানুষেরাও এবার ছিলেন না। তবে হোয়াইট হাউজে আসার পথে বাইডেনকে দুয়ো জানাতে রাস্তার দু পাশে ট্রাম্প সমর্থকেরা ঠিকই ছিলেন।